Sunday, September 4, 2016

সব বড় কিছুর পেছনে রয়েছে অসংখ্য ছোট’র অবদান


সব বড় কিছুর পিছনে রয়েছে অসংখ্য ছোট 'র অবদান ।  লেট মি এক্সপ্লেইন , আপনি আজকে যে অবস্থানে আছেন তার জন্য একমাত্র আপনিই দায়ী অন্য কেউ নয় ।  আজকে আপনি ভালো অবস্থানে থাকেন অথবা খারাপ যেরকম  থাকেন না কেনো সেইসবের পেছনে আপনার ভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য কিছুই নেই , সবই আপনার  কর্মফল । আপনার এই ভালো থাকা , খারাপ থাকার পিছনে আপনার নিজের করা আগের ছোট ছোট কাজগুলোই দায়ী ; যেগুলো হয়তো আপনি করেছেন বিগত কয়েকদিনে অথবা বিগত কয়েক মাসে অথবা কয়েক বছরে ।  কিন্তু বিশ্বাস করেন আর নাই বা করেন আপনার করা বিভিন্ন ছোট ছোট কাজই আজ আপনাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে ।  এই অবস্থানে আপনি একদিনে আসেননি আর এইভাবেই চলে আসেননি ।  

আপনার যেকোনো পরিস্থিতি , পরিণতির জন্যও একমাত্র আপনিই দায়ী , এমনকি আপনার অসুখ-বিসুখের জন্যও ।  এখন হয়ত বলবেন অসুখ তো আল্লাহর দান ,এইখানে আমার হাত কোথা থেকে আসলো ।  আল্লাহ প্রদত্ত ঠিক আছে কিন্তু নিজের দায়ভারটাই বেশী । ওই যে বললাম সব বড়  কিছুর পিছনে  অনেকগুলো ছোট'র অবদান ।  আজ তোমার জ্বর এসেছে অথবা ঠান্ডা লেগেছে , তোমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু ভেবে দেখো গতকাল তুমি ফ্রীজ থেকে আইসক্রিম বের করে খেয়েছো পুরোটা  আবার বৃষ্টিতেও ভিজেছো । আইসক্রিম খেতে আর বৃষ্টিতে  ভিজতে তোমার খুব ভালো লেগেছে , তাই আজকের তোমার এমন পরিনতি ।  


আপনার আজ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে , বিশ্রি একটা রোগ... ডাক্তার বললো এইটা খাওয়া যাবে না ঐটা খাওয়া যাবে না , এই করতে হবে সেই করতে হবে .. আরো কতো নিয়ম কানুন ;  অসহ্য... এতোসব কি মানা যায়? কিন্তু না এখন আপনাকে ডাক্তারের  কথা মানতেই হবে ,  না হলেই বুঝবে ব্লাড সুগারের ঠ্যালা কাকে বলে ;  কিন্তু একসময় এতো নিয়ম কানুন না মেনে শুধুমাত্র সামান্য কিছু কাজ করলেই আপনার হয়তো আজ আর ডায়াবেটিস এর মুখ দেখতে হতো না । মনে করে দেখেন খুব আরামে দিন কাটিয়েছেন আপনি , সেরকম কোন কায়িক পরিশ্রম আপনি করতেন না , খাবার দাবারেও তেমন কোন বাধ বিচার ছিলনা । আজকের ডায়াবেটিস আপনার একদিনের ফল না ... এখন কাজ সকাল বিকাল রুটিন  করে  খাওয়া আর সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করা।


আপনার শরীরে ধরা পড়েছে একটা টিউমার । ডাক্তার বললো অপারেশন করতে হবে । এখন আপনি বলতে পারেন এই টিউমারের জন্য তো আমি কোন ভাবেই দায়ী না । এটা কেন হলো ..?? কিন্তু এর জন্যও আপনি নিজেই দায়ী । মনে করে দেখেন ...মুখরোচক খাবার ছিল আপনার খুবই প্রিয়... সারাদিন ভাজাপোড়া ... এইটা ওইটা খেয়েই চলতেন... ডাক্তাররা বলেন বেশি মশলাদার, তৈলাক্ত, ভাজাভুজি, চর্বিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে টিউমারের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। 

এখন কি বলবেন আপনি ?

শেষ পর্যন্ত আজ আপনার বিশাল বড় একটা অসুখ ধরা পড়েছে... ডাক্তার বললো ফুসফুসে ক্যান্সার । বাঁচার উপায় খুবই কম। কিন্তু বিগত ১০ বছর আপনি ধূমপান করেছেন...প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকতো “ধূমপান মৃত্যু ঘটায়” বা “ধূমপান ক্যান্সারের কারণ” কিন্তু আপনি তা বিশ্বাসই করতেন না । আজ এটা তারই ফল ।






এরকম আরো অনেক কিছুই বলা যায় । আপনি মানেন আর না মানেন , বিশ্বাস করেন আর নাই করেন ...আপনার  সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুর জন্য শুধুমাত্র আপনি দায়ী । আর ফলটাও আপনাকেই ভোগ করতে হবে । আর যদি তা করতে না চান তবে আগে থেকেই সাবধান হয়ে যান ... কারণ সব বড় কিছুর পেছনেই রয়েছে আপনার অনেকগুলো ছোট ছোট কাজের অবদান ।।। 

পহেলা শ্রাবণে , টাঙ্গুয়ার হাওড়ে

এখানে টলমলে জল আকাশের রং চুরি করে নিত্য খেলা করে, পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে পরে সাদা মেঘের দল, সারি সারি গাছ প্রতিনিয়ত স্নান করে জলের বুকে যেখানে লুকিয়ে আছে রঙ্গিন বনের বসতি। এখানে সূর্য একরাশ হাসি নিয়ে জেগে উঠে পাহাড়ের বুক চিড়ে , চাঁদ এসে জলের আয়নায় তার রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে থমকে দাঁড়ায়; ঢেউয়ের কোলে দুলতে দুলতে ঘুমিয়ে পড়ে তারার সারি। কল্পনা নয়, সত্যি যেন মর্তের মাঝে স্বর্গের হাতছানি। না, কোন বিদেশ বিভুই নয়, এদেশেরই একটি জায়গা, নাম টাঙ্গুয়ার হাওর।

এখানে হাওরের জল আকাশের রং চুরি করে নীলের ভুবন সাজিয়েছে। মেঘমালা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যায়, দূর থেকে দেখে মনে হয় পানিতে যেন ভাসছে মেঘের ভেলা। সাহিত্যের কোন ভাষা, কোন উপমা দিয়ে সে রূপ বর্ননা করা সম্ভব নয়। উপভোগ করার মাঝেই পরম শান্তি। সীমাহীন এই হাওরে বর্ষাকালে চলে বিশাল ঢেউয়ের রাজত্ব। স্বচ্ছ টলমলে জলের নিচে দেখা যায় ঘাস, গাছ আর লতাপাতা বসতি, যেন জীবন্ত কোন অ্যাকুরিয়াম। কোন রকম ভেলা আর জাহাজ ছাড়াই যখন জলের মাঝে দাড়িয়ে থাকে ছোট ছোট গ্রামগুলো তখন মনে হবে যেন কোন এক অচেনা এক পৃথিবী এটি। গাঁয়ের শিশুরা অবলিলায় জলের বুকে ভাসিয়েছে নৌকাগাড়ি। ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে খিলখিল করে হাসে।
অসহ্য সুন্দর টাঙ্গুয়ার প্রাকৃতিক রূপ। পুরো হাওর গাছের সীমানা দিয়ে ঘেরা। সেই গাছও মাথাটুকু বাদে ডুবে আছে নীলের সমুদ্রে। এখানে বাতাস কখনো ক্লান্ত হয়না, এখানে আকাশের নিচে সাদা মেঘের বুক চিরে দাঁড়িয়ে আছে কচি পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের কোলে নাচে উদ্দোম, উত্তাল, দুরন্ত হাওরের জল।
টাঙ্গুয়ারে ভ্রমণ
শুরুতেই বলে রাখি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বর্ষায় গেলে এক ধরনের মজা আর শীতের দিনে গেলে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মজা ! আমরা ৭ বন্ধু গিয়েছিলাম বর্ষায় । আমি , Tonu , Rabbi , আকাশ , Abid , Al-Amin এবং Arnob
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ জলাশয়। মাছ ,বন, পাখী,জীববৈচিত্র,নির্মল বায়ূ,উন্মুক্ত আকাশ,মেঘালয় এর পাহাড় শ্রেণীর অপরূপ সৌন্দর্য এ গুলিই টাংগুয়ার হাওরের বিশেষ বৈশিষ্ট। জলাশয় গুলি যেন ছোট ছোট সমুদ্র্ । টাঙ্গুয়ার হাওড় হচ্ছে এমনি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা, যা না দেখলে আপনি বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে কত রকমের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সেখানে। দিগন্ত বিস্তৃত বিশাল হাওর, বিশাল জলরাশি, কিন্তু তা নদী বা সমুদ্রের মতো নয়, অন্য রকমের এক সৌন্দর্য। সাজানো শ্যাওলা যেন সাগর তলার বাগান । মাঝে-মাঝে হিজল বন, জসীমউদ্দীনের কথা মনে করিয়ে দেয়। হাওরের সঙ্গেই হেলান দিয়ে আছে বিশাল শিলং, মেঘালয়ের পাহাড়। সাঁতারের লোভ তো সামলাতেই পারবেন না। কী নেই সেখানে! সংক্ষেপে এটা হতে পারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন। কিন্তু এর মজাটা সুন্দরবনের চেয়েও আলাদা। কেউ যদি এই কর্মব্যস্ত জীবনে কয়েক দিনের জন্য রুটিন থেকে বেড়িয়ে আসতে চান, চান একটু মুক্ত বাতাস, দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ, ঘুরে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওরে ।
এ অঞ্চলের জনকন্ঠে প্রচলিত আছে:৬ কুড়ি কান্দা ৯ কুড়ি বিল নিয়ে এ হাওড় টাঙ্গুয়া। সত্যি বলতে কী দিগন্ত ব্যাপ্ত জল আর জল। চিক্ চিক্ তরঙ্গ রাশি। পশ্চিমে কুশিয়ারা নদী পূর্বে যাদুকাটা নদী টাঙ্গুয়া ছুঁয়ে। উত্তরে মেঘালয়। ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় তিন চার হাজার ফিট উচ্চতার সবুজ পাহাড়ে ঘেড়া। নিসর্গে মেঘ পরীদের হামাগুড়ি। বরফ আর নৌহোটেল থাকলে ভূস্বর্গ কাশ্মীরের ডাল লেক কেও হার মানাবে । হাওড়ের তরঙ্গে শৈবাল উদ্যানের বুকথেকে ওঠে কল্লোল। টাঙ্গুয়া ভাসতে থাকে সুর্যোদয়ের লোহিত আলোয়। গোলাবাড়ির হিজল করচ বনে পাখিদের কলরব। টাঙ্গুয়ায় পর্যটনে না এলে এর প্রকৃতি স্বদ মিলে না। তাই পর্যটনের আহ্বান অবকাশে জল ভ্রমণে টাঙ্গুয়ার শোভা দেখে যান।

ট্রেনে করে ঢাকা থেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ
কমলাপুর থেকে রাত ১১ঃ৩০ টায় আমরা নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেই । সকালে মোহনগঞ্জ পৌঁছাই । মোহনগঞ্জ থেকে ট্রলারে করে তাহিরপুর ।
ভাল দেখে নৌকা নেবেন। আশ-পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে হলে ছই-এর উপর সারাদিন কাটাতে হবে। ছই-এর উপরটা টিন সীট দিয়ে মোড়ানো, সাইডে বসবার ব্যবস্থা আছে এমন নৌকা হলে ভাল। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের প্রকৃত মজা নিতে হলে এই নৌকাতেই রাত্রি যাপন এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়া-কর্ম সারতে হবে... এটা ধরে নিতে পারেন। হাওরের জলে নৌকাভাসান ভ্রমণ যাত্রা হল শুরু। নদীর জলে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল করচ গাছের বন পেরিয়ে ছুটে চললো আমাদের নৌকা ।

বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওড়
বর্ষায় গেলে নৌকাই একমাত্র বাহন। উত্তর দিকে মেঘালয় রাজ্যের খাড়া পাহাড় আর তিন দিকে থৈ থৈ পানি! মাঠ-ঘাট সব পানি আর পানি! ভাটির দেশের প্রকৃত রূপ! সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা আর কিশোরগঞ্জ- এই তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত সেই অদ্ভূত জলরাশি। এই জলরাশির ভিতরেই মেঘালয়ের পাদদেশে টাঙ্গুয়ার হাওড়! বর্ষায় আলাদা করে টাঙ্গুয়ার হাওড় বলে কিছু থাকেনা... সব একাকার! টাঙ্গুয়ার হাওড়ে পৌঁছালেই দেখবেন গভীর কালচে পানি -- অনকে দূর পর্যন্ত কোন গাছ-গাছালীর উপরাংশ পানির উপরে দেখা যাচ্ছেনা! তখনই বুঝবেন আপনি যথাস্থানে পৌঁছে গেছেন।
আকাশ জুড়ে দেখবেন হরেক রকম মেঘ আর মেঘ। বর্ষায় শুধু সকালটা ছাড়া মোটামুটি সারাদিনই বৃষ্টি! সন্ধ্যায় বৃষ্টি একটু ধরে আসলেও মধ্যরাত থেকে আবারও ঝিরঝির বৃষ্টি! আর হ্যাঁ... সূর্য ডোবার আগ দিয়ে নৌকা নিয়ে চলে যাবেন টাঙ্গুয়ার হাওড়ের মাঝখানে.... সে এক অদ্ভূত ভাললাগা দৃশ্য! মনোরম, মোহনীয়!
বর্ষায় দেশী পাখি, যেমন....বক, দু'একটা পানকৌড়ী আর মাছরাঙা ছাড়া তেমন কোন পাখি চোখে পরবেনা । আম, জাম, কাঁঠাল এই জাতীয় পরিচিত গাছ খুব কমই দেখবেন। পরিচিতের মধ্যে তাল গাছটা পাবেন.... আর দেখবেন নাম না জানা নানা ধরনের গাছ গাছালী ।
তাহিরপুর থেকে টেকেরঘাট
তাহির পুর থেকে ট্যাকেরঘাট পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার বিস্তির্ণ জলরাশি। মাঝে মাঝে জনবসতি। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বুকে জীবনের স্পন্দন। বাড়ির সাথে বেঁধে রাখা নৌকা-বর্ষাকালে এখানকার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম।অবশ্য মোবাইলের কারণে হাওয়াই যোগাযোগের সুবিধাও পাচ্ছে এখানকার মানুষ।
কিছুক্ষণ নদী পথে চলে একটা সময় হাওরে প্রবেশ করে আমাদের নৌকা । আমরা দূর থেকে দেখি পাহাড়ের সারি। মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকা পাহাড় হাতছানি দিতে থাকে। পাহাড়ের আরো কাছে চলে আসে নৌকা । পাহাড়ের কোলে মেঘেদের আনাগোনা । আছে ছোটখাটো মানব বসতির চিহ্ন। আমরা যখনই কোন লোকালয় পার হচ্ছিলাম। মানুষজন দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছিল। কোন কোন জায়গায় হাত নাড়িয়ে জানাচ্ছিল অভিবাদন। আমরাও প্রত্যুত্তর করছিলাম।
টেকেরঘাট
গোধুলির সোনালী মেঘে এ হাওড় যেন রোম্যান্টিক হয়ে ওঠে। ফুরফুরে বাতাসে নৌকোর ছৈয়ে বসে দোল খাওয়া পর্যটণকে একটা মনোরম মাত্রা এনে দেয়। এ যেন বর্ণনাতিত ভ্রমণ জগৎ।
নৌকোর ছৈয়ের ওপর জলসা। গান কবিতা দর্শণ প্রত ভাবনা অভিব্যক্তি বিকাশ। চাঁদের আলোয় চলছে হাট জলসা। নৌকোর আরাম দোলায় ষোল কলার চাঁদনী রাত হয়ে ওঠছেএকদম ফাটাফাটি ! কবিতার মতো হয়ে ওঠছে ছন্দপ্রাণ। আমি নৌকার ছৈয়ে বসে দেখতে থাকি আকাশ, পানি, পাহাড়, মেঘ আর বিস্তির্ণ প্রকৃতি। মনের কোণে উঁকি দেয় কবিতা লেখার বাসনা । চিল্কার সৌন্দর্য নিয়ে যেমন লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু! এই সৌন্দর্য আমার দেখা আগের সব সৌন্দর্যকে যেন ম্লান করে দেয়। আমি হারিয়ে যেতে থাকি শাশ্বত বাংলা মায়ের আঁচলে ।
টেকেরঘাটে অবতরণ
ধীরে ধীরে টেকেরঘাটে অবতরণমরা টেকেরঘাটের কাছে পোঁছে যাই। ট্যাকের ঘাটের যতই নিকটবর্তী হচ্ছিলাম পাহাড়ের সৌন্দর্য ততই বাড়ছিল। আকাশের রং একেকবার একেক রকম হচ্ছিল। কখনো বৃষ্টি নেমে আসার ভয় দেখাচ্ছিল। তবু আমরা বৃষ্টিহীন প্রহরেই নামলাম ট্যাকের ঘাট।
আমরা সবাই চলে যাই একটি লেকের কাছে। এখান থেকে একসময় চুনা পাথর তোলা হত। সেই পাথরে চলত ছাতকের চুনাপাথরের কারখানা। বৃটিশরা যাবার সময় এমন কায়দা করে দেশ ভাগ করে যে আমরা পাহাড়ের চুনাপাথরের অধিকার হারাই। বেকার হয়ে যায় পাথর তোলা এবং পরিবহনের শত শত যন্ত্রপাতি। এখনো পড়ে আছে কিছু যন্ত্রপাতি অব্যবহার আর অযত্নে জীর্ণ।
খাওয়া-দাওয়া
হাওরে ঘুরতে ঘুরতে আশে পাশের কোন বাজার থেকে সদায় করে নিতে পারেন। রান্না নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, কেননা নৌকার মাঝিরা মোটামুটি খুব ভাল মানের বাবুর্চি এক এক জন। রান্নার যাবতীয় উপকরনও নৌকায় রয়েছে। এখানকার নৌকাগুলোও চমৎকার। ছইওয়ালা নৌকা, সুতরাং রোদ বৃষ্টির কোন চিন্তা নেই। ছই এর নিচে যেমন অফুরন্ত জায়গা তেমনি ছই এর উপরেও আছে বসার মত জায়গা। আড্ডা দিয়ে আর প্রকৃতি দেখে সময়টা পার করে দিতে পারেন।
কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা থেকে যাওয়া
ঢাকা থেকে রাতে রওনা দিতে পারেন ট্রেনে করে । রাত ১১ঃ ৩০ টায় হাওড় এক্সপ্রেস নামে একটা ইন্টার সিটি ট্রেনে করে যেতে পারেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে । মোহনগঞ্জ পোঁছাবেন সকালে । সেখান থেকে ট্রলারে করে চলে যাবেন তাহিরপুর । ট্রলার ছাড়বে ৯ টায় । দুপুরের নাগাদ পোঁছে যাবেন তাহিরপুরে । সেখানে দুপুরের খাবারটা সেরে নিয়ে এবার টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য নৌকা ভাড়া করতে হবে । ২৪ ঘন্টার জন্য ৩০০০-৩৫০০ টাকা নিবে । এরপর টেকেরঘাট যাবেন আর ঘুরে আসবেন টাঙ্গুয়ার হাওড় ।
ঢাকায় ফিরে আসা
আসার সময় না হয় বাসে করেই ফিরলেন । তাহিরপুরে এসে সেখান থেকে লেগুনাতে করে চলে আসবেন সুনামগঞ্জ । সুনামগঞ্জ থেকে বাস নিয়মিত আসা-যাওয়া করে সিলেটে । বাসে করে সিলেট এসে সিলেটের বাসে করে ঢাকা চলে আসবেন ।
** যাবার সময় প্রয়োজনীয় টুকি-টাকি কিনে নেবেন। ধুমপানের অভ্যেস থাকলে অন্ততঃ দুইদিনের রসদ সাথে নিতে ভুলবেন না!


** লাইফ জ্যাকেট নিতে ভুলবেন না ।

Thursday, September 1, 2016

ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার যোগসূত্রে আসবে সাফল্য

সময়টা ২০১১ সালের আগস্ট কিংবা  সেপ্টেম্বর এর দিকে হবে ।  কলেজে ভর্তি হয়েছি খুব বেশিদিন হয় নি । একদিন ক্লাসে ম্যাথ স্যার এসে একটা গ্রাফ আঁকলেন । গ্রাফের দ্বারা তিনি বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে কলেজের ২ টা বছর অতি দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাবে । তারপর তিনি যেই ব্যাপারটা শিখালেন আমাদের আমার মনে হলো আমার জীবনের শ্রেষ্ট সূত্র শিখেছি সেদিন । তিনি বোর্ডে নিচের তিনটি লাইন লিখলেন -

ইচ্ছা(২০)+ প্রচেষ্টা(৮০) = সাফল্য কতো হবে ?
ইচ্ছা(৮০) + প্রচেষ্টা(২০) =সাফল্য কতো হবে ?
ইচ্ছা(৫০) + প্রচেষ্টা(৫০) =সাফল্য কতো হবে ?

অনেক ভুল উত্তরের মধ্যে সেদিন আমিও ভুল বলেছিলাম । এটা সম্পর্কে আমার আগে থেকে কোনো ধারনা ছিলো না । স্যার যখন ব্যাপারটা বিশ্লেষন করে বললেন  তখন মনে হলো আমি আমার জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা শিখেছি আজকে ।

স্যার ব্যাখ্যা করলেন ব্যাপারটা -

প্রথম সূত্রটির উত্তর হবে সাফল্য= ০ !
কোনো একটা কাজ করার জন্য সেই কাজের প্রতি তোমার নিজের ইচ্ছা নাই অথবা খুব কম কিন্তু তোমার প্রচেষ্টা অনেক সেক্ষেত্রে তোমার সাফল্য হবে শুন্য (০) ।

দ্বিতীয় সূত্রটির উত্তর হবে সাফল্য =০ !
কারন , কোনো কাজ করার প্রতি তোমার তীব্র ইচ্ছা আছে কিন্তু সেই ইচ্ছার প্রতিফলন তুমি নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঘটাতে পারো নাই । তাই সেখানেও তোমার সাফল্য হবে শুন্য (0) ।

ধরুন ,আপনি এখন  HSC পরিক্ষা দিয়ে বুয়েটে ভর্তি পরিক্ষা দিবেন ।  আপনার ছোট বেলা থেকে ভীষন ইচ্ছা বুয়েটে পড়বেন । কিন্তু আপনি কখনোই সেই অনুযায়ী আপনার মেধাকে বিকশিত করেন নি এবং আপনার কোনো প্রচেষ্টা নেই ।  তাহলে পারবেন কি আপনার লক্ষে পৌঁছাতে ? পারবেন না । চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে কেউ বলে দিতে আপনি সেখানে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না , কারন আপনার তো কোনো প্রচেষ্টাই নেই ।

এবার আসি তৃতীয় সূত্রে , এক্ষেত্রে সাফল্য হবে =১০০ ভাগ ।
কারন আপনি আপনার নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী চেষ্টা করেছেন । কোনোটাতেই কমতি ছিলো না কখনো ।  আপানার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিলো বুয়েটে পড়ার এবং আপনি সেই অনুযায়ী আপনার প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রেখেছেন ।  আপনার সাফল্য আসবেই ।

হয়তো আমি আমার সেই স্যারের মতো ওতোটা ভালো করে আপনাদের বুঝাতে পারিনি । কিন্তু স্যারের কথা শুনার পর আমি এটা বিশ্বাস করি করি যে এই সত্য কথাগুলোর উপর ভিত্তি করেই আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবীর সকল মানুষের জীবনযাত্রা ।  আপনি পিঁপড়ার গতিপথে বারবার বাধা দিচ্ছেন , তাই বলে কিন্তু পিঁপড়া যাওয়া-আসা বন্ধ করে দেয় নাই ।  আপনি হয়ত লক্ষ্য করে দেখবেন বারবার পিঁপড়ার গতপথে বাধা দেবার পরেও সে তার নির্দিষ্ট গতিপথে যাওয়ার চেষ্টা করে ।  এখানেই আপনি তার ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টার  প্রমান পেলেন ।  ঠিক তেমনতা মানুষের ক্ষেত্রেও । আমি কোন কাজে বারবার ব্যর্থ হচ্ছি , তাই বলে কি আমি থেমে যাবো ? আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর গতিপথ পরিবর্তন
করবো  ? উত্তর হচ্ছে না । আপনি সর্বোচ্চ কতবার ব্যর্থ হবেন ?  একবার না একবার সাফল্য তো আমার কাছে ধরা দিবেই ।

একটা বাস্তব উদাহরন দিতে চাই এবার , আপনারা কেউ কি বলতে পারবেন কোন দেশে এতো দুর্নীতি ? কেন এতো হত্যা,খুন, মারামারি ? আমার কথাটা কতুটুকু সত্য সেটা জানিনা তাও আমি বলবো এসব কর্মকান্ড যারা ঘটায় তারা অধিকাংশই একসময় ভালো মানুষ ছিলো ! তাদের একটা লক্ষ্য ছিলো । লক্ষ্যে পৌছানোর প্রচন্ড ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু !! কিন্তু হয়তো তাদের প্রচেষ্টা ছিলো না ভালো লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য । তাই তারা তাদের গতিপথ পরিবর্তন করে অসদুপায়ে তাদের লক্ষ্য পৌছানোর চেষ্টায় আছে । কারণ এই পথে ইচ্ছা বেশি থাকলেই হয় প্রচেষ্টা লাগে না বেশি । কারণ এই পথে আমাদের গ্রহণ করার জন্য বসে আছে হাজারো কুচক্রকারী  ।


যখন ক্লাস নাইনে ছিলাম তখন পড়েছি বাংলাদেশে সরকারী কর্মচারীদের ঘুষ খাওয়ার মুল কারণ হলো ধনী হওয়া এবং অধিক সম্পদের মালিক হওয়ার তীব্র ইচ্ছা তাদের মধ্যে । তাই তারা আজ ঘুষ খায় । অসদুপায় অবলম্বন করে । কিন্তু আমরা কি পারিনা অসদুপায় অবলম্বন না করে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে  ??

অবশ্যই পারি :-) প্রতিটি কাজে আমাদের শুধুমাত্র ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার যোগসূত্র ঘটাতে হবে সঠিকভাবে ।